SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান - NCTB BOOK

বিদ্যুৎ প্রবাহ হলো মূলত ইলেকট্রনের প্রবাহ। এ প্রবাহ আবার দু'রকম- এসি এবং ডিসি প্রবাহ। কোনো বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের জন্য দরকার এর দু'প্রান্তের বিভব পার্থক্য। এই বর্তনীতে তড়িত্যন্ত্র ও উপকরণসমূহকে শ্রেণি ও সমান্তরাল সংযোগ যুক্ত করা যায়। এছাড়া বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ মাপার জন্য অ্যামিটার বা যেকোনো দু'প্রান্তের বিভব পার্থক্য মাপার জন্য দরকার ভোল্টমিটার।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

   • এসি এবং ডিসি প্রবাহের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • তড়িৎ বর্তনীতে রোধ, ফিউজ এবং চাবির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • তড়িৎ প্রবাহ এবং বিভব পার্থক্যের মধ্যকার সম্পর্ক লেখচিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারব,
   • শ্রেণি ও সমান্তরাল বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ এবং বিভব পার্থক্যের ভিন্নতা প্রদর্শন করত পারব;
   • তড়িৎ প্রবাহ এবং বিভব পার্থক্য পরিমাপে অ্যামিটার ও ভোল্টমিটারের সঠিক ব্যবহার করতে পারব;
   • তড়িতের কার্যকর ব্যবহার এবং অপচয় রোধে নিজে সচেতন হব এবং অন্যদের সচেতন করব।

Content added By

দুটি ভিন্ন বিভবের ধাতব বস্তুকে যখন পরিবাহী তার দ্বারা যুক্ত করা হয় তখন তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। আধুনিক ইলেকট্রন তত্ত্ব থেকে আমরা জানি প্রত্যেক ধাতব পদার্থে কিছু মুক্ত ইলেকট্রন থাকে, যারা ঐ পদার্থের মধ্যে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে। যখন দুটি ভিন্ন বিভবের ধাতব বস্তুকে তার দ্বারা সংযুক্ত করা হয়, তখন নিম্ন বিভবসম্পন্ন ধাতব বস্তু থেকে ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন উচ্চ বিভবসম্পন্ন ধাতব বস্তুর দিকে প্রবাহিত হয়। 

চিত্র ৯.১ : বিদ্যুৎ বর্তনী

যতক্ষণ পর্যন্ত ধাতব বস্তুর মধ্যে বিভব পার্থক্য বর্তমান থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ঋণাত্মক আধানের এই প্রবাহ চলে । কোনোভাবে যদি ধাতব বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী বিভব পার্থক্য বজায় রাখা যায় তখন এই প্রবাহ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে। ঋণাত্মক আধান বা ইলেকট্রনের এই প্রবাহের জন্যই তড়িৎ প্রবাহিত হয়। মূলত কোনো পরিবাহীর যেকোনো প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে একক সময়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তাই হলো তড়িৎ প্রবাহ। প্রচলিত তড়িৎ প্রবাহের দিক ইলেকট্রন প্রবাহের বিপরীত দিকে হয়। 

তড়িৎ প্রবাহের একক : তড়িৎ প্রবাহের একক হলো অ্যাম্পিয়ার। একে সাধারণত A দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

 

তড়িৎ বিভব পার্থক্য

প্রতি একক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানান্তর করতে সম্পন্ন কাজের পরিমাণ হলো ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব পার্থক্য। দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য না থাকলে তড়িৎ প্রবাহিত হবে না। ফলে কোনো আধান প্রবাহিত হবে না এবং কোনো কাজও সম্পন্ন হবে না। 

Content added By

চিত্র ৯.২ : অপর্যায়বৃত্ত প্রবাহতড়িৎ প্রবাহ দুই প্রকার— (ক) অপর্যায়বৃত্ত প্রবাহ বা সমপ্রবাহ বা একমুখী প্রবাহ (খ) পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ বা পরিবর্তী প্রবাহ।

 

(ক) অপর্যায়বৃত্ত বা একমুখী বা ডিসি প্রবাহ

চিত্র ৯.২ : অপর্যায়বৃত্ত প্রবাহ

একই দিকে প্রবাহিত হয়, সেই প্রবাহকে অপর্যায়বৃত্ত প্রবাহ বলে। যখন সময়ের সাথে সাধারণত তড়িৎ প্রবাহের দিকের কোনো পরিবর্তন না ঘটে, অর্থাৎ যে তড়িৎ প্রবাহ সবসময় তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারি থেকে অপর্যায়বৃত্ত প্রবাহ পাওয়া যায় (চিত্র ৯.২)। আবার ডিসি জেনারেটরের সাহায্যেও এই প্রকার তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন করা যায়।

 

(খ) পর্যায়বৃত্ত বা এসি প্রবাহ

চিত্র ৯.২ : অপর্যায়বৃত্ত প্রবাহ

যখন নির্দিষ্ট সময় পরপর তড়িৎ প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয়, সেই তড়িৎ প্রবাহকে পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ বলে। বর্তমান বিশ্বের সকল দেশের তড়িৎ প্রবাহই পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ। এর কারণ তুলনামূলকভাবে এটি উৎপন্ন ও সরবরাহ করা সহজ এবং সাশ্রয়ী। পর্যায়বৃত্ত প্রবাহের উৎস জেনারেটর বা ডায়নামো দেশের বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে জেনারেটরের সাহায্যে পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ উৎপন্ন করা হয়। পর্যায়বৃত্ত প্রবাহের দিক পরিবর্তন দেশভেদে বিভিন্ন হয়। যেমন— বাংলাদেশে পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ প্রতি সেকেন্ডে পঞ্চাশবার এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সেকেন্ডে ষাটবার দিক পরিবর্তন করে।

Content added || updated By

বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি হয় ইলেকট্রনের প্রবাহের জন্য। কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্য থাকলে এই প্রবাহ শুরু হয়। এক্ষেত্রে ইলেকট্রন নিম্ন বিভব থেকে উচ্চ বিভবের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ইলেকট্রন স্রোত পরিবাহীর মধ্য দিয়ে চলার সময় পরিবাহীর অভ্যন্তরস্থ অণু-পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলে এর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বিদ্যুৎ প্রবাহও বিঘ্নিত হয়। পরিবাহীর এই বাধাদানের ধর্ম হলো রোধ। মূলত, পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় তাই হলো রোধ।

ও'মের সূত্র
কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হবে কিনা তা নির্ভর করছে ঐ পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের উপর। এছাড়াও পরিবাহীর আকৃতি ও উপাদান এমনকি পরিবাহীর তাপমাত্রার উপরও এর তড়িৎ প্রবাহের মাত্রা নির্ভর করে। তাপমাত্রা যদি স্থির রাখা যায় তবে নির্দিষ্ট পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ শুধুমাত্র এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের উপর নির্ভর করে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য ও এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের অনুপাত থেকে ঐ তাপমাত্রায় ঐ পরিবাহীর রোধ পরিমাপ করা হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আকৃতির একটি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ এর দুই প্রান্তের সাথে বিভব পার্থক্য একটি নিয়ম মেনে চলে। এই নিয়মটির জন্য জর্জ সাইমন ও'মের (১৭৮৩–১৮৫৪) একটি সূত্র প্রণয়ন করেন, যা ও'মের সূত্র নামে পরিচিত।

ও'মের সূত্র : তাপমাত্রা স্থির থাকলে কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের মান পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের মানের সমানুপাতিক।

ও'মের সূত্র থেকে এটা সহজেই বলা যায় যে, পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য বেশি থাকলে তড়িৎ প্রবাহের মাত্রা বেশি হবে। আবার এই বিভব পার্থক্য কম থাকলে তড়িৎ প্রবাহ কম হবে (চিত্র ৯.৪)।

কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য V, এর রোধ R এবং তড়িৎ প্রবাহ I হলে

চিত্র ৯.৪ : ও'মের সূত্রের লেখচিত্র

 

তড়িৎ প্রবাহ, I=VR

সুতরাং কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ পরিবাহীর নিজস্ব রোধের ব্যস্তানুপাতিক।

রোধের একক
রোধের এস আই একক হলো ও'ম। কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য ১ ভোল্ট এবং এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ ১ অ্যাম্পিয়ার হলে, ঐ পরিবাহীর রোধ হবে ১ ও'ম।

Content added By

মানুষের চলার জন্য যেমন পথের প্রয়োজন, তড়িৎ প্রবাহের জন্যও প্রয়োজন নির্দিষ্ট পথ। তড়িৎ প্রবাহ চলার এই সম্পূর্ণ পথকেই তড়িৎ বর্তনী বলে। যখন তড়িৎ উৎসের দুই প্রান্তকে এক বা একাধিক রোধ, তড়িৎ যন্ত্র বা উপকরণের সাথে যুক্ত করা হয়, তখন একটি তড়িৎ বর্তনী তৈরি হয়। একটি চাবি বা সুইচের সাহায্যে বর্তনী বন্ধ করা বা খোলা যায়। বর্তনী বন্ধ থাকলে তড়িৎ প্রবাহিত হবে, খোলা থাকলে তড়িৎ প্রবাহিত হবে না।

সাধারণত বর্তনীতে তড়িৎযন্ত্র ও উপকরণসমূহ দু'ভাবে সংযুক্ত করা হয়। এগুলো হলো : (ক) শ্রেণিসংযোগ বর্তনী (খ) সমান্তরাল সংযোগ বর্তনী

 

(ক) শ্রেণি সংযোগ বর্তনী

চিত্র ৯.৫ : শ্রেণিসংযোগ বর্তনী

কোনো বর্তনীতে যদি রোধ, তড়িত্যন্ত্র বা উপকরণসমূহ এমনভাবে সংযুক্ত হয় যেন প্রথমটির এক প্রান্তের সাথে দ্বিতীয়টির অন্য প্রান্ত, দ্বিতীয়টির অপর প্রান্তের সাথে তৃতীয়টির এক প্রান্ত এবং এরূপে সব কয়টি পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে, তবে সেই সংযোগকে অনুক্রম বা শ্রেণিসংযোগ বলে৷

চিত্রে রোধ R2R1, অ্যামিটার A এবং চাবি K-কে অনুক্রমে সংযুক্ত করা হয়েছে। তড়িৎ প্রবাহ পরিমাপের জন্য অ্যামিটার ব্যবহৃত হয় এবং একে বর্তনীতে অন্যান্য উপকরণের সাথে অনুক্রমে যুক্ত করা হয়। অ্যামিটারের প্রান্তদ্বয়ে + এবং – চিহ্ন থাকলে + চিহ্নিত প্রান্তকে অবশ্যই কোষের ধনাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করতে হবে। এ সংযোগের ক্ষেত্রে বর্তনী সকল অংশে সর্বদা একই পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ হয়। কিন্তু বিভিন্ন অংশে বিভব পার্থক্য ভিন্ন হতে পারে।

 

(খ) সমান্তরাল সংযোগ বর্তনী

কোনো বর্তনীতে দুই বা ততোধিক রোধ, তড়িৎ উপকরণ বা যন্ত্র যদি এমনভাবে সংযুক্ত থাকে যে সব কয়টির এক প্রান্ত একটি সাধারণ বিন্দুতে এবং অপর প্রান্তগুলো অপর একটি সাধারণ বিন্দুতে সংযুক্ত হয় তবে সেই সংযোগকে সমান্তরাল সংযোগ বলে। সমান্তরাল সংযোগে প্রত্যেকটির মধ্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তড়িৎ প্রবাহ চলে কিন্তু প্রত্যেকটির দুই সাধারণ বিন্দুর বিভব পার্থক্য একই থাকে।

চিত্র ৯.৬ : সমান্তরাল বর্তনী

কোনো একটি বর্তনীতে যদি দুটি বাল্ব সংযোগ করা হয় তাহলে কি বাল্ব দুটি একইভাবে জ্বলবে?

সিরিজ সংযোগে একই তড়িৎ প্রবাহ দুটি বাল্বের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। একটি বাৰ যত উজ্জ্বলভাবে জ্বলত দুটি বাল্ব সিরিজ সংযোজনের ফলে তার চেয়ে কম উজ্জ্বলভাবে জ্বলবে। আবার কোনো একটি বার যদি ন হয়ে যায় তবে সমস্ত বর্তনীর মধ্য দিয়েই তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে অপর বাল্বটিও জ্বলবে না।

সমান্তরাল সংযোগের প্রত্যেকটি বান্ধের মধ্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পথে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। তাই একটি বাল্ব নষ্ট হলেও অন্যটি জ্বলবে। প্রতিটি বাল্বই পৃথক পৃথকভাবে জ্বালানো বা নেভানো যাবে। প্রতিটি বাল্বের প্রাস্তদ্বয়ের বিভব পার্থক্য একই থাকবে। অর্থাৎ প্রতিটি বাহুই তড়িৎ কোষের পূর্ণ বিদ্যুৎ চালক শক্তি পাবে। ফলে দুটি বাহুই উজ্জ্বলভাবে জ্বলবে। বাল্ব দুটি যদি এক এক করে তড়িৎ কোবের সাথে সংযু্ক্ত করা হতো তখন বহু উজ্জ্বলভাবে জ্বলতো বাঘ দুটি সমান্তরালভাবে সংযুক্ত করলেও একই উজ্জ্বলতা থাকবে। গৃহে বিদ্যুতায়নের জন সমান্তরাল বর্তনীই সুবিধাজনক।

কাজ : বড় সাদা কাগজে শ্রেণিসযোগ ও সমান্তরাল বর্তনীর চিত্র অংকন করে বিদ্যুৎ প্রবাহ চিহ্নিত করো।
Content added By

অ্যামিটার

অ্যামিটার একটি বৈদ্যুতিক বস্ত্র। এর সাহায্যে বর্তনীর তড়িৎ প্রবাহ সরাসরি অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপ করা যায়। অ্যামিটারকে বর্তনীর সাথে শ্রেণি সংযোগে যুক্ত থাকে। এই যন্ত্রে একটি গ্যালভানোমিটার থাকে। গ্যালভানোমিটার হচ্ছে সেই যন্ত্র যার সাহায্যে বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের অস্তিত্ব ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। গ্যালভানোমিটার সম্পর্কে তোমরা পরে বিস্তারিত জানবে।

চিত্র ৯.৭ : অ্যামিটার

এই গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ নির্ণয়ের জন্য একটি সূচক বা কাঁটা লাগানো থাকে। সূচকটি অ্যাম্পিরার, মিল্যিাম্পিয়ার বা মাইক্রোঅ্যাম্পিয়ার এককে লাশকাটা একটি স্কেলের উপর ঘুরতে পারে। বিদ্যুৎ কোষের মতো অ্যামিটারেও দুটি সংযোগ প্রাপ্ত থাকে, একটি ধনাত্মক ও একটি ঋণাত্মক প্রাপ্ত। সাধারণত ধনাত্মক প্রায় লাল এবং ঋণাত্মক প্রাপ্ত কালো রঙের হয়। বর্তনীতে অ্যামিটারকে +Q= প্রকাশ করা হয়।

 

ভোষ্টমিটার

যে যন্ত্রের সাহায্যে বর্তনীর যেকোনো দুই বিন্দুর মধ্যকার বিভব পার্থক্য সরাসরি ভোল্ট এককে পরিমাপ করা যায় তাকে ভোল্টমিটার বলে। বর্তনীর যে দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য পরিমাপ করতে হবে ভোল্টমিটারকে সেই দুই বিন্দুর সাথে সমান্তরালে সংযুক্ত করতে হয়।

চিত্র ৯.৮ ভোল্টমিটার

এই যন্ত্রে একটি গ্যালভানোমিটার থাকে। এর বিক্ষেপ নির্ণয়ের জন্য একটি সূচক বা কাঁটা লাগানো থাকে। সূচকটি ভোল্ট এককে দাগাঙ্কিত একটি স্কেলের উপর ঘুরতে পারে। বর্তনীর যে দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য পরিমাপ করতে হয় ভোল্টমিটারটিকে সেই দুই বিন্দুর সাথে সমান্তরালে সংযুক্ত করতে হয়। তড়িৎ কোষ বা অ্যামিটারের মতো ভোল্টমিটারেও দুটি সংযোগ প্রাপ্ত থাকে, একটি ধনাত্মক ও একটি ঋণাত্মক প্রাপ্ত। সাধারণত ধনাত্মক প্র া এবং প্রপ্ত কनো রঙের হয়। বর্তনীতে ভোল্টমিটারকে = প্রকাশ করা হয়।

Content added By

আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব তড়িৎ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি সেগুলোর মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হলে তা নষ্ট হয়ে যায়। বাড়ির তড়িৎ বর্তনীতে কোনো কারণে অতিরিক্ত তড়িৎ প্রবাহিত হলে অনেক সময় তার থেকে বাড়িতে আগুন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এ ধরনের বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য বর্তনীতে এক ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই বিশেষ ব্যকথা হলো ফিউজ তার ব্যবহার করা। ফিউজ সাধারণত টিন ও সীসার একটি সংকর ধাতুর তৈরি ছোট সরু তার। এটি একটি চিনামাটির কাঠামোর উপর দিয়ে আটকানো থাকে। তারটি সরু এবং গলনাঙ্ক কম। এর মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার অতিরিক্ত তড়িৎ প্রবাহিত হলে এটি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে গলে যায়। ফলে তড়িৎ বর্তনী বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এভাবে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে ফিউজ যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে। বর্তনীতে ফিউজ সিরিজ সংযোগ করতে হয়।

চিত্র ১.৯ : ফিউজ

ফিউজ তারের মান বিভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত আমরা ৫ অ্যাম্পিয়ার, ১৫ অ্যাম্পিয়ার, ৩০ অ্যাম্পিয়ার এবং ৬০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ তার ব্যবহার করে থাকি। ১০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ মানে এর মধ্য দিয়ে ১০ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এটি গলে যাবে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির জন্য বিভিন্ন মানের ফিউজ ব্যবহার করতে হয়। বাজি, পাখা, টিভি ইত্যাদির জন্য ৫ জ্যাম্পিয়ার ফিউজ এবং ইলেকট্রিক কেটলি বা ইন্দ্রির জন্য ১৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ ব্যবহার করতে হয়। বাড়ির মেইन ফিউজ ৩০ বা ৬০ অ্যাম্পিয়ারের হয়ে থাকে।

ব্যাপারটা আার একটু বোঝার চেষ্টা করো৷ টেলিভিশন ৫ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য পুড়ে যায় । এখন যদি টেলিভিশনের সাথে ৩০ অ্যাম্পিয়ারের ফিউজ লাগাও তাহলে কী হবে। এ ফিউজ কোনো কাজে আসবে না। ইলেকট্রিক কেটলির সাথে ৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ লাগালে কী হবে? সুইচ অন করলেই ফিউজটি গলে যাবে। কারণ ইলেকট্রিক কেটলিতে ৫ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। যেখানে যা প্রয়োজন সেখানে তেমন মানের ফিউজ ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মানের ফিউজ ব্যবহার করলে কোনো কাজ দিবে না, অর্থাৎ বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে না। আবার কম মানের ফিউজ ব্যবহার করলে বারবার ফিউজ তার পুড়ে যেয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করবে। কেউ কেউ আবার বাড়িতে ফিউজ পুড়ে গেলে তার লাগাবার সময় দুই তিনটি তার একত্র করে লাগান। এ রকম কখনো করা উচিত নয়। কারণ, এতে ফিউজের মান বেড়ে যায়। দুইটি ১০ অ্যাম্পিয়ারের ফিউজ তার একত্র করলে ২০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ হয়ে যাবে।

Content added By

আমাদের দেশে দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই চলছে। চাহিদার সাথে নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার মধ্যে বাড়তি যোগ হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন। যার প্রভাব পড়ছে বিদ্যুতের চাহিদার উপর। বাড়ছে অফিস, বাসা, শপিং কমপ্লেক্স। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বড় বড় বিল্ডিং করার সাথে বাড়ছে লিফটের চাহিদা। চাহিদা বাড়ছে নির্মাণ কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার করার প্রবণতা। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। বিদ্যুতের কার্যকর ব্যবহার করে এর অপচয় রোধে সকলকে সমভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বিদ্যুতের কার্যকর ব্যবহার ও অপচয় রোধে আমরা নিচের কাজগুলো করতে পারি।

 

• বাসায় বা অফিসে প্রয়োজন ব্যতীত লাইট ফ্যান বা এয়ারকুলার বন্ধ রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকা।

• সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে ফ্লোরোসেন্স বা এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করতে হবে, এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।

• রান্নার কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার পরিহার করতে হবে। প্রেসার কুকারে রান্না করলে ২৫% বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।

• অপ্রয়োজনে এয়ারকুলারের ব্যবহার না করা নিশ্চিত করতে হবে।

• ফ্রিজ কেনার সময় প্রয়োজনীয় সাইজের কেনা উচিত। প্রয়োজনের চেয়ে বড় সাইজের ফ্রিজে বাড়তি বিদ্যুৎ লাগে।

• বড় বড় ফ্যাক্টরিগুলোতে নিজেদের জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা।

• সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহারে স্বউদ্যোগী হওয়া।

 

নতুন শব্দ
তড়িৎ বিভব, তড়িৎ প্রবাহ, রোধ, একমুখী প্রবাহ, পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ, তড়িৎ বর্তনী, অ্যামিটার, ভোল্টমিটার, ফিউজ

 

এই অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম-

- দুটি ভিন্ন বিভবের ধাতব বস্তুকে সংযুক্ত করলে এদের যে বৈদ্যুতিক অবস্থা এদের মধ্যে চার্জ আদান প্রদানের দিক নির্ণয় করে তাই হলো বৈদ্যুতিক বিভব।

- যতক্ষণ পর্যন্ত দুটি ধাতব বস্তুর মধ্যে বিভব পার্থক্য বর্তমান থাকে তড়িৎ প্রবাহ ততক্ষণ পর্যন্ত চলে। 

- কোনোভাবে যদি ধাতব বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী বিভব পার্থক্য বজায় রাখা যায় তখন তড়িৎ প্রবাহ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে।

- পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় তাই হলো রোধ।

- তাপমাত্রা স্থির থাকলে কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের মান পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের মানের সমানুপাতিক।

- যখন তড়িৎ প্রবাহ সবসময় একই দিকে প্রবাহিত হয়, সেই প্রবাহকে অপর্যায়বৃত্ত প্রবাহ বলে।

- যখন নির্দিষ্ট সময় পর পর তড়িৎ প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয়, সেই তড়িৎ প্রবাহকে পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ বলে। 

- বর্তনীতে তড়িৎযন্ত্র ও উপকরণসমূহ দু'ভাবে সংযুক্ত করা হয়। এগুলো হলো শ্রেণিসংযোগ বর্তনী ও সমান্তরাল সংযোগ বর্তনী।

- অ্যামিটারের সাহায্যে বর্তনীর তড়িৎ প্রবাহ সরাসরি অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপ করা যায়।

- যে যন্ত্রের সাহায্যে বর্তনীর যেকোনো দুই বিন্দুর মধ্যকার বিভব পার্থক্য সরাসরি ভোল্ট এককে পরিমাপ করা যায় তাই ভোল্টমিটার।

- ফিউজ বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য বর্তনীতে এক ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা।

- বিদ্যুতের কার্যকর ব্যবহার করে এর অপচয় রোধে সকলকে সমভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.